নেপাল একটি অপরূপ এবং বৈচিত্র্যময় দেশ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে নেপাল দেশ সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য এবং সেখানে ভ্রমণের সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
ভূগোল: নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার একটি পাহাড়ি দেশ, যা ভারত ও চীনের মাঝে অবস্থিত। এখানে রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম পর্বত, মাউন্ট এভারেস্ট।
- রাজধানী: কাঠমান্ডু
- ভাষা: নেপালি (সরকারি ভাষা), এছাড়া স্থানীয় নানা ভাষা ও উপভাষাও প্রচলিত।
- মুদ্রা: নেপালি রুপি (NPR)
- মৌসুম: সাধারণত ৪টি মৌসুমে বিভক্ত - বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, ও শীত।
নেপালে ভ্রমণের সুবিধা
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
- সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান
- আউটডোর অ্যাডভেঞ্চার
- সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
- স্বাগতম মনোভাব
- সাহায্যপ্রাপ্ত অবকাঠামো
বাংলাদেশীদের জন্য নেপাল কি কি ভিসা দেয়
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নেপাল বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে, এবং প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা উদ্দেশ্য রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান ভিসার ধরন উল্লেখ করা হলো:
পর্যটন/টুরিস্ট ভিসা:
- মেয়াদ: ১৫, ৩০, ৯০ দিনের জন্য প্রাপ্তি সম্ভব।
- উদ্দেশ্য: ভ্রমণ এবং পর্যটনের জন্য।
- যারা পাবেন: সাধারণ পর্যটকরা যারা নেপালের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং অন্যান্য পর্যটন স্থল দেখার জন্য যান।
- শর্তাবলী: আবেদনকারীদের অবশ্যই পর্যটনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে এবং ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী দেশে থাকার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
ব্যবসায়িক/বিজনেস ভিসা:
- মেয়াদ: সাধারণত ৬ মাস বা ১ বছরের জন্য।
- উদ্দেশ্য: ব্যবসায়িক কার্যক্রম, সভা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির জন্য।
- যারা পাবেন: ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বা ব্যবসায়িক সঙ্গী যারা নেপালে ব্যবসার কাজ বা বৈঠকের জন্য আসছেন।
- শর্তাবলী: আবেদনকারীদের ব্যবসার উদ্দেশ্য প্রমাণ করতে হবে এবং নেপালে বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরিকল্পনা থাকতে হবে।
অধ্যয়ন/স্টুডেন্ট ভিসা:
- মেয়াদ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠক্রমের মেয়াদের জন্য।
- উদ্দেশ্য: নেপালে শিক্ষালাভের জন্য।
- যারা পাবেন: ছাত্রছাত্রীরা যারা নেপালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অধ্যয়ন করতে চান।
- শর্তাবলী: আবেদনকারীদের একটি স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে এবং শিক্ষার মেয়াদের জন্য ভিসার আবেদন করতে হবে।
কর্মসংস্থান/ওয়ার্ক ভিসা:
- মেয়াদ: নির্দিষ্ট কর্মসংস্থানের জন্য নির্ধারিত মেয়াদ।
- উদ্দেশ্য: নেপালে কাজ করার জন্য।
- যারা পাবেন: কর্মজীবী পেশাজীবীরা যারা নেপালে কাজ করার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।
- শর্তাবলী: আবেদনকারীদের একটি বৈধ চাকরির প্রস্তাবপত্র থাকতে হবে এবং নেপালে কাজ করার অনুমতি নিতে হবে।
ট্রানজিট ভিসা:
- মেয়াদ: সাধারণত ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত।
- উদ্দেশ্য: নেপালের মাধ্যমে অন্য দেশে যাত্রার সময়।
- যারা পাবেন: যারা নেপালের মাধ্যমে অন্য দেশে ট্রানজিট করবেন।
- শর্তাবলী: আবেদনকারীদের নেপালের মাধ্যমে যাওয়ার জন্য অন্য দেশে পৌঁছানোর টিকেট থাকতে হবে।
নেপাল সরকার উল্লেখিত ভিসাগুলো বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে কয়েকটি পদ্ধতিতে দিয়ে থাকে..
অন-অ্যারাইভাল ভিসা:
- নেপালে পৌঁছানোর পর আপনি অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
- ইমিগ্রেশন কার্ড পূরণ: বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন কার্ড পূরণ করতে হবে।
- ভিসা ফি প্রদান: ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিনের জন্য $৩০, ৩০ দিনের জন্য $৫০, এবং ৯০ দিনের জন্য $১২৫।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা: পাসপোর্ট, রিটার্ন টিকেট, হোটেল বুকিং এর কপি এবং পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিতে হবে।
স্টিকার ভিসা:
- যদি আপনি সড়কপথে নেপাল যেতে চান, তাহলে আপনাকে স্টিকার ভিসা নিতে হবে। এর জন্য আপনাকে নেপালের ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:
- ভিসা আবেদনপত্র পূরণ: দূতাবাস থেকে বা তাদের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদনপত্র সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা: পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, হোটেল বুকিং এর কপি, ফিরতি টিকেট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
- ভিসা ফি প্রদান: ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। সাধারণত ১৫ দিনের জন্য $৩০, ৩০ দিনের জন্য $৫০, এবং ৯০ দিনের জন্য $১২৫।
ই-ভিসা:
- নেপাল সরকার ই-ভিসা চালু করেছে, যা অনলাইনে আবেদন করা যায়। এর জন্য আপনাকে নেপাল দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। ধাপগুলো হলো:
- অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ: ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড: পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, হোটেল বুকিং এর কপি এবং ফিরতি টিকেট আপলোড করতে হবে।
- ভিসা ফি প্রদান: অনলাইনে ভিসা ফি প্রদান করতে হবে।
ভিসা পেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে
তবে যেকোনো ভিসা করতে গেলে আপনার কিছু ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র লাগবে। আমরা কাগজ বা ডকুমেন্টকে ৪টি ভাগে বিভক্ত করব। সুতরাং আপনারা জানতে পারবেন যে ইন্ডিয়া/ভারতের ভিসা করতে কি কি কাগজ বা ডকুমেন্ট লাগবে।
লিগ্যাল কমন ডকুমেন্ট/কাগজপত্র
- পেশাগত প্রমাণ
- আর্থিক প্রমাণ
- বসবাসের প্রমাণ
- অন্যান্য কাগজপত্র
১. লিগ্যাল ও সবার জন্য কমন ডকুমেন্ট
- পাসপোর্ট (মিনিমাম ৬ মাস মেয়াদ, ২টা খালি পাতা)
- এনআইডি কার্ড
- ফটো (পাসপোর্ট সাইজ)
২. পেশগত প্রমাণ
ব্যাবসায়ী হলে
- ট্রেড লাইসেন্স
- ভিজিটিং কার্ড
- কোম্পানী ডকুমেন্ট (মেমোরেন্ডাম, ফরম ১২ ইত্যাদি)
চাকরীজীবী হলে
- NOC/এনওসি (No Objection Certificate)
- ভিজিটিং কার্ড
- স্যালারি সার্টিফিকেট
ছাত্র হলে
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
- প্রত্যয়নপত্র
- প্রতিষ্ঠান খোলা অবস্থায় হলে ছুটির মঞ্জরীপত্র
ফ্রিল্যান্সার হলে
- মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইলের ছবি
- আর্নিং হিস্ট্রি স্ক্রীনশট
- আর্নিং সার্টিফিকেট
ডাক্তার হলে
- BMDC থেকে সনদপত্র
- হাসপাতাল থেকে NOC (No Objection Certificate)
আইনজীবী হলে
- Bar Council থেকে সনদপত্র
- Law Farm থেকে NOC
৩. আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬মাসের)
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট)
৪. অন্যান্য কাগজপত্র
- টিকেট রিজার্ভেশন (Return Ticket Booking)
- হোটেল রিজার্ভেশন (Hotel Booking)
- কাভার লেটার
- অন্যান দেশের ভিসা.
ভিসা খরচ
বাংলাদেশ সহ সার্কভুক্ত দেশ গুলোর জন্যে প্রতি বছর প্রথম ভিসার জন্যে কোন ভিসা ফি লাগবেনা। তবে একই বছরে দ্বিতীয় ভিসার জন্যে ভিসা ফি লাগবে। এক বছরে দ্বিতীয়বার ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা ফি –
- ১৫ দিনের মাল্টিপল ভিসার জন্য ৩২১০ টাকা
- ৩০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রির জন্য ৫৩৫০ টাকা এবং
- ৯০ দিনের মাল্টিপল এন্ট্রির জন্য ১৩৩৭৫ টাকা।
নেপাল এম্বাসি
নেপাল এম্বাসি ও প্রয়োজনীয় লিংক
নেপাল দূতাবাস, জাতিসংঘ রোড, রোড নং 2 বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ ঢাকা - 1212, বাংলাদেশ।
ইমেইল: eondhaka@dhaka.net, eondhaka@mofa.gov.np
ওয়েবসাইট: https://bd.nepalembassy.gov.np
ভিসা ফর্ম : https://bit.ly/2Iy87QB
ভিসা সংক্রান্ত তথ্য: https://bd.nepalembassy.gov.np/visa/
ভিসার পর ভ্রমণের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ থেকে নেপালে আপনার জার্নি শুরু করার আগে, কয়েকটি প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি:
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: আপনার নেপাল টুরটির আগে নিশ্চিত করুন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কিনা। তবে একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, নেপালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ মিনিমাম ৬ মাস বা তার বেশি হতে হবে। অনেকসময় আমরা নির্ধারিত তারিখে টুর প্ল্যান করার আগে পাসপোর্টের মেয়াদের কথা খেয়ালে রাখি না।
মানি ট্রান্সফার এবং বাজেট নির্ধারণ: বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে অবশ্যই টাকার বিনিময় এক্সচেঞ্জ করে নিবেন। থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এবং নেপালে আপনার সমস্ত এক্টিভিটিসের একটি বাজেট আগে থেকেই নির্ধারণ করে যাবেন। তাহলে নেপালের আপনার থাকাকালীন সময়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
ট্র্যাভেল ইন্সুরেন্স: শেয়ারট্রিপের হলিডে প্যাকেজের সাথে ট্র্যাভেল ইন্সুরেন্সেও নিয়ে নিতে পারেন। কেন? যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো।
নেপাল যদি বাঙালি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি দেশ তারপরও যাতে কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন পড়তে না হয় তাই পূর্বপ্রস্তুতি থাকাটা বেশ জরুরী।
নেপালে যাওয়ার পদ্ধতি
বাংলাদেশ থেকে নেপাল প্রতিদিন অসংখ্য ফ্লাইট যাওয়া আসা করে । যদি ফ্লাইটের বিকল্প হিসেবে কিছুটা কম খরচে নেপালে যেতে চান সেই ব্যবস্থাও আছে। নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে:
ফ্লাইট: বাংলাদেশ থেকে নেপাল পৌঁছানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দ্রুততম উপায় হল ফ্লাইট। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটে যেতে সাধারণত সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দু ঘন্টা।
ফ্লাইটে জনপ্রতি আপনার খরচ হতে পারে ২০-২৭ হাজারের মতো। সবচেয়ে ডিসকাউন্টেড রেটে ফ্লাইট রেট পেতে শেয়ারট্রিপ থেকে ঢাকা টু নেপাল বিমান ভাড়া চেক করে দেখতে পারেন।